ভারতে বসেই মোদিকে বেকায়দায় ফেললেন মার্কেল
প্রকাশিত : ১৪:১৬, ২ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৪:১৮, ২ নভেম্বর ২০১৯

দু’দিনের ভারত সফরে চলমান কাশ্মীর সংকট নিয়ে মুখ খুলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। আর এতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। মার্কেলের এ সফরে এখন পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে ১১টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আরও পাঁচটি চুক্তিপত্রের যৌথ ঘোষণা হয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই কাশ্মীর ইস্যুতে ইউরোপের অন্যতম ক্ষমতাশীল এই নেতার মন্তব্যে উভয়ের সম্পর্কে অস্বস্তির ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শনিবার জার্মান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক বিশদ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে দুই দেশ। সংবাদ সম্মেলনে দুই রাষ্ট্রনেতা বাণিজ্যিক ও কৌশলগত, দু’টি ক্ষেত্রেই সমন্বয় গভীর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, মোদির সঙ্গে বেঠকে মার্কেল পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ না করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়েছেন। ওইদিন রাতেই তার সঙ্গে আসা বিদেশি সাংবাদিকদের মার্কেল কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। যদিও তা ভারতীয় সরকারের চাওয়া ছিল না।
এসময় মার্কেল কাশ্মীরে শান্তি আনয়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানতে চেয়ে বলেন, “কাশ্মীরের পরিস্থিতি অত্যন্ত নড়বড়ে। সেখানকার উন্নতি প্রয়োজন। কাশ্মীর ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাই।”
জার্মান চ্যান্সেলরের এমন মন্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে এর জবাব দেননি মোদি। তার এমন মন্তব্যে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
এমন সময়ে মার্কেল দিল্লি সফরে আসলেন, যখন রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা খুইয়ে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, গত আগস্টে মোদি সরকার কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই জার্মানির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাথা গলানো উচিত নয়।
কিন্তু বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছিল জার্মান ভাষায়। ফলে এই নিয়ে তখন বিশেষ প্রচার হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, কাশ্মীর থেকে অবিলম্বে সমস্ত বিধি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা উচিত।
এমন বিবৃতি দেয়ার পরই তিন দিন আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জার্মান প্রতিনিধি নিকোলাউস ফেস্টও কাশ্মীর সফর করে বলেছিলেন, সেখানকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
কিন্তু নিকোলাউস অতি দক্ষিণপন্থী ও জার্মানির ঘরোয়া রাজনীতিতে মার্কেলের দল থেকে তার দলের অবস্থান অনেকটাই আলাদা হওয়ায় মোদি ভেবেছিলেন তার এ মন্তব্য মার্কেলের ওপর প্রভাব পড়বে না। কিন্তু, তা হয়নি। মার্কেল সেখানকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান।
তবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোদী মার্কেলকে জানান, কাশ্মীর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণগুলিও তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু তার পরেও দেখা গেল, মার্কেলের মন্তব্যে নিকোলাউসের সেই মন্তব্যেরই অনুরণই রয়ে গিয়েছে।
তবে মার্কেলের এই ‘বেসুর’-এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি নিয়ে খুশিই ছিল ভারত।
পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ না করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোট বাধার অঙ্গীকার এবং জার্মানির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের সাহায্যে ২০২২-এ নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন— যৌথ বিবৃতিতে এই দু’টি বিষয়কেই একসঙ্গে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
বিমান পরিষেবা, শিক্ষা, সমুদ্র প্রযুক্তি, মহাকাশ সংক্রান্ত সহযোগিতা ক্ষেত্রে ১১টি চুক্তি সই করেছে দু’দেশ। আরও পাঁচটি চুক্তিপত্রের যৌথ ঘোষণা হয়েছে।
ম্যার্কেল জানান, ৫জি প্রযুক্তি থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)— বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পথে হাঁটতে প্রস্তুত তার দেশ। তার কথায়, ‘‘ভারতের বড় পরিকাঠামো শিল্পে আমরা যোগদান করতে উৎসাহী।”
/এআই/
আরও পড়ুন